দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে লক্ষিপুর শান্তিরবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ৫ মাস যাবত পানিবন্দি থাকায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ও বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে যেতে বসেছে। সরজমিনে জানা গেছে, ওই এলাকার কাছাকাছি কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ১৯৯২ সালে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যোতসাহী ব্যাক্তি এলাকার কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা বিকাশে বিকশিত করার জন্য বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।
পরবর্তিতে ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি একতলা ভবন নির্মিত হলে বিদ্যালয়টির গুনগতমান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গত ৩/৪ বছর পূর্বে বিদ্যালয়টির ও মাঠের চারিদিকে কিছু লোকজন নতুন পাঁকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে মাঠের পানি বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমের পুরো সময়টা কয়েক বছর যাবত পানি বন্দি থাকে ওই বিদ্যালয়টি।
এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও সুরাহা না হওয়ায় ওই অবস্থাতেই বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, মাঠের পানি বেরুনোর রাস্তা না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি থাকতে হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসেনা। কচুরীপানার গন্ধে অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৫ম শ্রেণির ছাত্রী মিনুয়ারা ও তানজিলা জানায়, ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা ফুটবল টুর্ণামেন্টে আমরা উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, বিদ্যালয়ের মাঠ পানিবন্দি থাকায় আমরা প্রাকটিস করতে পারছিনা। আগামী কয়েকদিন পর দিনাজপুর জেলা পর্যায়ে খেলতে যাব। এজন্য দ্রুত মাঠটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তারা আরও জানায়, টয়লেট যেতে তাদের বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়।
বিদ্যালয় সভাপতি শওকত আলী জানান, সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রেজুলেশনসহ আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। জেবুন্নেসা বেগম নামে এক মহিলা শিক্ষক জানান, নলকুপটি পানিতে ডুবে থাকার ফলে পানি গন্ধ হয়ে খাওয়ার অনুপোযোগি পড়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই পানি পান করায় অসুস্থ হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আফরোজ জেসমিন জানান, বিদ্যালয়টি সরজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় অমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন সরকার জানান, কিছু লোকজন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে তাদের নিজ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বসে আলোচনা স্বাপেক্ষে বর্ষা মৌসুম শেষে সমস্যা সমাধান করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম রব্বানী জানান, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যেকোন উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় অভিভাবকগণ দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক কমেন্ট